স্থানের নামঃ আড়িয়াল বিল
অবস্থানঃ শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪২ কিঃমিঃ দক্ষিণে। এই বিলটি পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত।
আয়তনঃ ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার
প্রধান জীবিকাঃ মূলত চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ হয়। তবে মৌসুমভেদে কখনো মাছ ধরে, গবাদিপশু পালন করেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
গঠনঃ বিলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে। ধারণা করা হয়, অতি প্রাচীন কালে এ স্থানে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থল ছিল যা পরবর্তিতে উভয় নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে এই স্থান শুষ্ক হয়ে বিলে পরিণত হয়। বিলটিকে একটি ছিটমহলসম জলাভূমিও বলা যায়।
আকর্ষণীয় স্থানসমূহঃ পুরো আড়িয়াল বিলটিই প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য দারুণ একটি আকর্ষণীয় জায়গা। বিশেষত বর্ষায় নৌকায় ভ্রমণকালে প্রকৃতির অপার রূপ দেখা যায়। বিলের দিকে এগোতে থাকলেই পড়বে শ্যামসিদ্ধি গ্রাম যেখানে প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু শ্যামসিদ্ধি মঠ আছে। এছাড়া আশেপাশের গ্রাম, গ্রামীণ বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনযাত্রা, সুন্দর প্রকৃতিও চোখে পড়বে।
সূচনাঃ বহুল আলোচিত একটি বিলের নাম হচ্ছে এই আড়িয়াল বিল! এই বিলটি শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এটি দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। ২০১১ সালে এই আড়িয়াল বিলে তৎকালীন সরকার নতুন বিমান বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় এবং সাথে সাথে তুমুল উত্তেজনা এবং বিতর্ক তৈরি হয়। তুমুল উত্তেজনা এবং বিতর্ক শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে গড়ায় এবং হতাহতের ঘটনাও ঘটে। তবে ২০১৯ সালের শেষ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে আড়িয়ালে বিমানবন্দর নির্মাণে জনমত বাড়ছে।
বিস্তারিতঃ মৌসুম পরিবর্তনের সাথে সাথে আড়িয়াল বিলের রূপ ও দর্শনও পরিবর্তন হতে থাকে। তবে বিশেষত বর্ষা এবং শীতকালেই আড়িয়ালের পূর্ণ যৌবন দেখতে পাওয়া যায়। আর তাই আমরা এই দুই মৌসুম নিয়েই কিছুটা ধারণা দিচ্ছি।
বর্ষায় সাধারণত পানিতে টইটুম্বর থাকে আড়িয়াল বিল। পানি থাকে একেবারেই স্থির। মনে হবে ঢেউহীন এক পানির রাজ্য আড়িয়াল বিলে আপনি বিচরণ করছেন। কোথাও কোথাও পানি এতোটাই পরিষ্কার যে নীচের শৈবাল, আগাছাগুলো পর্যন্ত দেখা যায়। বিলের যত গাছ-গাছালি থাকে সেগুলোর অর্ধাংশ পানির নীচে বর্ষাতে তলিয়ে যায়। মনে হবে যেন ম্যানগ্রোভ কোন এক ফরেস্টে বুঝি চলে এসেছেন। রোদ উঠে সাদা মেঘ পানিতে দারুণ প্রতিবিম্ব তৈরি করে। চারিপাশ শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। অজস্র নাম না জানা গাছ-গাছালিতে ভরপুর এই বিল। নৌকা নিয়ে এগোতে থাকলে দেখা যাবে শাপলা ফুলের সমারোহ। পানিতে লালের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। গ্রামের মানুষদের জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ মারার দৃশ্যও গোচর হবে এই বর্ষায়। বিকেল হলেই বিলের বাজারগুলোতে বসে তরতাজা মাছের বাজার। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসে এখান থেকে তাজা মাছ কিনে নিয়ে যান।
শীতের মৌসুমে বিল শুকিয়ে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেতে পরিণত হয়। এই সিজনে স্থানীয়রা নানা রকম শীতের সবজি চাষ করে। সবজিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ আকর্ষণ থাকে বিশাল আকৃতির মিষ্টি কুমড়া। এক একটি বিশাল সাইজের কুমড়ার ওজন ১-২ মণের বা অধিকও হয়ে থাকে। শীতের মৌসুমে আড়িয়াল বিলে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় নানান জাতের ছোট-বড় পাখি। বক, শালিক, অতিথি পাখি সহ বিভিন্ন জাতের পাখি দেখা যায়।